কপি পোস্ট: মোহাম্মাদ হোসাইন (বাংলাদেশ)
ধৈর্য সহকারে পড়ুন নিজের ইমাম (আঃ) সম্পর্কে জানুন
ইমাম মাহদী (আ.) কে ?
তিনি কোথায় অবস্থান করছেন?
بسم الله الرحمن الرحیم
▪️নাম - এই মহান ব্যক্তির নাম সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তার নাম ও উপনাম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নামেই।
নাম :- মুহাম্মদ ।
▪️উপনাম : আবুল কাসেম। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন “মাহদীর নাম আমার নামেই” অনুরূপ ভাবে হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে “মুহাম্মদ” মাহদীর নাম।
(বোরহান ফি আলামতে মাহদী আখেরী যামান, মুত্তাকী হিন্দি, ৩য় অধ্যায় হাদিস নং ৮,৯।)
▪️উপাধী :-তার বিভিন্ন উপাধীর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছে মাহদী, কাসেম, সাহেবুজ্জামান, সাহেবুল আমর , মুনতাজার ও হুজ্জাত । তবে তিনি মাহদী নামেই অধিক পরিচিত। এটি তার সু প্রসিদ্ধ নাম।
▪️তাকে ‘মাহদী’ বলা হয়েছে এ কারণে যে, তিনি নিজে হেদায়েত প্রাপ্ত এবং অন্যদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত দান করবেন।
▪️তাকে ‘কায়েম’ বলা হয়েছে কেননা তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন।
▪️ তাকে ‘মুনতাজার’ বলা হয়েছে কেননা সকলেই তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
▪️তাকে ‘বাকিয়াতুল্লাহ’ বলা হয়েছে কেননা তিনি হচ্ছেন আল্লাহর হুজ্জাত। হুজ্জাত অর্থাৎ সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর স্পষ্ট দলিল ।
▪️বংশ পরিচয় :-তিনি নবী পরিবারের বারোতম পুরুষ, ইমাম হোসাইন (আ.) এর নবম বংশধর,
▪️পিতা-ইমামতের আকাশের একাদশতম নক্ষত্র হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)।
▪️মাতা : সম্মানীতা ও সম্ভ্রান্ত রমণী নারজীস। তিনি ছিলেন রোম সম্রাটের দৌহিত্রা।
▪️জন্ম তারিখ : ২৫৫ হিজরীর ১৫ই শা ’ বান রোজ শুক্রবার।
জন্মস্থান : ইরাকের সামাররা শহরে।
▪️বয়স : এখন আরবী ১৪৪৩ সন ,আর তিনি আরবী ২৫৫ সনে জন্ম গ্রহণ করেছেন ;সে অনুযায়ী তাঁর বয়স আনুমানিক একহাজার একশ আটাশি বছর চলছে। আর এভাবেই চলতে থাকবে যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ্ রাব্বুল আ ’ লামিন চান। আর তিনি একদিন আল্লাহ্ রাব্বুল আ ’ লামিনের অনুমতিতেই পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন এবং পৃথিবীকে অত্যাচার ও জুলুমের মধ্যে নিমজ্জিত অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে সমস্ত স্থানে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবেন।
▪️ইসলামের দ্বাদশ পথ নির্দেশক হযরত হুজ্জাত ইবনুল হাসান আল মাহ্দী (আ.) ২৫৫ হিজরীর ১৫ই শাবান (৮৬৮ খৃস্টাব্দে) শুক্রবার ভোরে ইরাকের সামাররা শহরে একাদশ ইমামের গৃহে জন্ম গ্রহণ করেন।
▪️তাঁর পিতামাতা হচ্ছেন যথাক্রমে ইসলামের একাদশ পথ নির্দেশক হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ও সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিতা রমণী নারজীস। যিনি সুসান ও সাইকাল নামেও পরিচিত। তিনি রোমের বাদশার ছেলে ইউসায়া ’ র কন্যা এবং সামউ ’ ন (সে হযরত ঈসা (আ.) এর একনিষ্ঠ অনুসারী ছিল)-এর বংশধর ছিলেন। তিনি এমনই সম্মানিতা ছিলেন যে ,ইমাম হাদী (আ.)-এর বোন হাকিমা খাতুন তাকে নিজের ও তার বংশের নেত্রী এবং নিজেকে তার সেবিকা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।
▪️যখন নারজীস খাতুন রোমে থাকতেন রাতে অসাধারণ স্বপ্ন দেখতেন। একবার তিনি স্বপ্নে নবী আকরাম (সা.) ও ঈসাকে (আ.) দেখলেন যে ,তাকে ইমাম হাসান আসকারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করালেন। অন্য আরও একটি স্বপ্নে দেখলেন যে হযরত ফাতিমা (সাঃআ.)-এর দাওয়াতে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়টিকে তিনি তার পরিবারের কাছে ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে গোপন রেখেছিলেন।
▪️তারপর মুসলমান ও রোমানদের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় রোমের বাদশাহ্ যুদ্ধের ময়দানের দিকে রওনা হলো। এদিকে নারজীস খাতুন স্বপ্নের মধ্যে নির্দেশ প্রাপ্ত হলেন যে ,সৈন্যদের সেবা করার জন্য যে সকল দাসী বা সেবিকা যুদ্ধের ময়দানে পাঠানো হয় তাদের সাথে যেন অপরিচিতের মত একেবারে সীমান্তের কাছাকাছি সৈন্যদের যে তাঁবু আছে সেখানে চলে আসেন। তিনি তাই করলেন। তাদের সাথে যাওয়ার সময় এপাশের মুসলমান সীমান্ত রক্ষীরা তাদেরকে বন্দী করলো। তাকে রাজ পরিবারের সদস্য বুঝতে না পেরে বা সেবিকা ভেবেই বন্দীদের সাথে বাগদাদে নিয়ে গেল।
▪️এই ঘটনাটি ইসলামের দশম পথ প্রদর্শক ইমাম হাদী (আ.)-এর ইমামতের শেষের দিকে ঘটেছিল। ইমাম হাদী (আ.) রোমান ভাষায় লেখা একটি চিঠি যা তিনি নিজেই লিখেছিলেন তা তাঁর এক ভৃত্যকে দিয়ে বাগদাদে নারজীস খাতুনের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ইমামের সেই ভৃত্য তাকে দাসী বিক্রয়ের স্থান থেকে কিনে নিয়ে সামাররায় ইমামের কাছে নিয়ে এল। তিনি স্বপ্নের মধ্যে যা কিছু দেখেছিলেন ইমাম সেগুলো তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন ,তিনি একাদশ ইমামের স্ত্রী ও এমন এক সন্তানের জননী যে এই পৃথিবীর অধিকর্তা হবে। আর পৃথিবীর বুকে ন্যায়-নীতির প্রতিষ্ঠাকারী। তারপর ইমাম হাদী (আ.) তাকে তাঁর বোন হাকিমা খাতুনের (যিনি নবী পরিবারের সম্মানিতা নারী ছিলেন) হাতে তুলে দেন।
▪️হাকিমা খাতুন যখনই ইমাম আসকারী (আ.)-এর কাছে আসতেন তার ব্যাপারে দোয়া করতেন যে ,আল্লাহ্ যেন তাকে সন্তান দান করেন। তিনি বলেন : একদিন ইমাম আসকারীকে দেখতে গেলাম ও আগের দোয়ারই পুনরাবৃত্তি করলে তিনি বললেন : যে সন্তানের জন্য দোয়া করছেন আল্লাহ্ তা আমাকে দিয়েছেন। সে আজ রাতেই দুনিয়ায় আগমন করবে।
▪️নারজীস খাতুন এগিয়ে এসে আমার পা থেকে জুতা খুলে নেওয়ার জন্য বলল : আমার সম্মানিতা নেত্রী আপনার জুতোজোড়া আমাকে দিন।
বললাম : তুমিই তো আমার নয়ন মণি ও আমার কর্ত্রী। আল্লাহর কসম আপনাকে আমার জুতা খুলে নিতে বা আমার সেবা করতে দেব না। কেননা প্রকৃতপক্ষে আমিই আপনার সেবিকা।
▪️ইমাম আসকারী (আ.) আমার কথাটি শুনতে পেয়ে বললেন : ফুফু আম্মা আল্লাহ্ আপনাকে উপযুক্ত পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।
সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কাছে থাকলাম। তারপর চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এক দাসীকে আমার পোশাক আনতে বললাম। ইমাম বললেন : ফুফু আম্মা ,আজ রাত আমাদের কাছে থেকে যান। কেননা আজ রাতে এমন এক শিশু ভূমিষ্ঠ হবে যে আল্লাহর কাছে অনেক সম্মানিত ও প্রিয়। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ মৃত দুনিয়াকে আবার জীবিত করবেন।
বললাম : হে আমার পথনির্দেশক! আপনি কার ভুমিষ্ঠ হওয়ার কথা বলছেন ?আমি তো নারজীস খাতুনের মধ্যে গর্ভবতী থাকার কোন লক্ষণই দেখলাম না!
বললেন : নারজীসের মাধ্যমেই হবে ,অন্য কারো মাধ্যমে নয়।
▪️আমি উঠে গেলাম এবং নারজীসকে দ্বিতীয় বারের মত নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। কিন্তু তার মধ্যে গর্ভবতী থাকার কোন লক্ষণই পেলাম না। ইমামের কাছে ফিরে এলাম এবং আমার পর্যবেক্ষণের কথা তাকে জানালাম। তিনি মুচকি হেসে বললেন : ভোরে আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে যে ,তার গর্ভে সন্তান ছিল। কেননা সে মূসা কালিমুল্লাহর মায়ের ন্যায়। সে কারণেই তার গর্ভাবস্থা প্রকাশিত নয়। আর কেউ তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়কে জানতো না। কেননা ফেরাউন মূসার খোঁজে (এজন্য যে সে দুনিয়ায় আসতে না পারে) গর্ভবতী মহিলাদের পেট ফেঁড়ে বাচ্চা বের করে মেরে ফেলেছিল। আর যে শিশু আজ রাতে জন্ম নিবে সেও মূসার মতই (ফেরাউনদের ক্ষমতাকে ধ্বংস করে ফেলবে) এবং তারাও তার খোঁজে আছে।
▪️হাকিমা খাতুন বলেন : আমি ভোর পর্যন্ত নারজীস খাতুনের পরিচর্যায় ছিলাম। সে শান্ত হয়ে আমার পাশে ঘুমিয়ে ছিল। কোন প্রকার নড়া-চড়াও করেনি। রাতের শেষের দিকে অর্থাৎ ছুবহ্ সাদেকের সময় আচমকা নড়ে উঠলে আমি তাকে আমার কোলের মধ্যে নিয়ে আল্লাহর নাম পড়ে তার শরীরে ফুঁক দিলাম।
▪️ইমাম পাশের ঘর থেকে সূরা কদর পড়ে তার মাথায় ফুঁ দিতে বললেন। আমি তাই করলাম। নারজীসের কাছে তার শরীরের অবস্থা জানতে চাইলাম। সে বলল : যা কিছু আমার মাওলা আপনাকে বলেছিল তা পরিস্কার হয়ে গেছে।
আমি ইমামের নির্দেশ অনুযায়ী সূরা কদর পড়ে তার মাথায় ফুঁ দিতে থাকলাম। এই সময় তার পেটের শিশুটিও আমার সাথে একই সুরে সূরা পড়তে শুরু করল। আমি যাই পড়ি সেও আমার সাথে তাই পড়ে। সে আমাকে সালাম দিল। আমি দারুণভাবে চমকে উঠলাম। ইমাম পাশের ঘর থেকে আবারও বললেন : আল্লাহ্ রাব্বুল আ ’ লামিনের কর্মে আশ্চর্যান্বিত হবেন না। আল্লাহ্ তা ’ য়ালা আমাদেরকে (ইমামদের) শিশু অবস্থাতেই তাঁর প্রজ্ঞা দ্বারা সজ্জিত করেন আর পরিপূর্ণ বয়সে দুনিয়াতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেন।
▪️ইমামের কথা শেষ না হতেই নারজীস আমার পাশ থেকে উধাও হয়ে গেল। বলা যায় যেন আমার ও তার মাঝে একটি পর্দা টাঙানো হয়েছে। কেননা তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। চিৎকার দিয়ে ইমামের কাছে ছুটে গেলাম। তিনি বললেন : ফুফু আম্মা ফিরে যান। তাকে অচিরেই আগের জায়গাতে দেখতে পাবেন।
ফিরে এলাম। কিছু সময় যেতে না যেতেই ঐ পর্দার প্রলেপটি আমাদের মধ্য থেকে সরে গেল। আমি নারজীসকে দেখলাম সে যেন নূরের আলোর মধ্যে ডুবে আছে। তাকে দেখতে গেলে ঐ নূরের আলোক ছটায় আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। যে পুত্র সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে তাকেও দেখলাম ,সে সেজদারত অবস্থায় আছে এবং তর্জনী উঠিয়ে বলল :
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই ,তিনি অদ্বিতীয় ও তাঁর কোন শরিক নেই এবং বাস্তবিকই আমার পিতামহ মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল এবং মু ’ মিনদের নেতা আলী (আ.) আমার পিতা।
▪️তারপর একের পর এক নিজে সহ অন্যান্য ইমামগণের ইমামতের সাক্ষ্য দিয়ে বললেন : হে আল্লাহ্! আমার প্রতিশ্রুতি প্রদানের স্থান ও কালকে ত্বরান্বিত কর ,আমার কাজকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাও ,আমার প্রতিটি পদক্ষেপ দৃঢ় করতে দাও এবং আমার মাধ্যমেই এই দুনিয়াতে ন্যায় ও নীতির প্রতিষ্ঠা কর ... ।
▪️সপ্রিয় পাঠকবৃন্দ,
আসুন আরও বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইমাম মহামানব মওলা সাহেবুজ্জামান (আঃ)কে জানি।
▪️হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর তিরোধনের পর মুসলমানগণ দুই দলে বিভক্ত হয়ে পরে এক দল অর্থাৎ সুন্নি সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে নবী (সা.) তার কোন প্রতিনিধি নিয়োগ করে যাননি বরং এ গুরু দায়িত্ব তার উম্মতদের উপর অর্পন করে গেছেন। আর অন্য দল অর্থাৎ শিয়া সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে তিনি তার প্রতিনিধি বা ইমাম নিযুক্ত করে গেছেন। এই ইমামদের সংখ্যা হচ্ছে বারোজন, যাদের প্রথম হচ্ছেন হযরত আলী (আ.) আর শেষ হযরত মাহদী (আ.)। এই বারো ইমাম সর্ম্পকে বিভিন্ন হাদীস ও রেওয়াযেত বর্ণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য গ্রন্থ সমূহ হচ্ছে সহীহ আল বুখারী, সহীহ আল মুসলিম, সহীহ আত তিরমিযি, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ। ইমামত নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে ও হযরত মাহদী (আ.) যে শেষ ইমাম এবং শেষ যামানায় তার আবির্ভাব ঘটবে তার ইমামত সম্পর্কে কারো মধ্যেই কোন মতভেদ নেই।
অবশ্য বাহাই সম্প্রদায় এ সর্ম্পকে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে থাকে। শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই নয় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ও তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে বিশ্বাস করে যে, পৃথিবীর শেষ যুগে একজন ত্রাণকর্তা ও মুক্তির দূত আসবেন-যিনি সমস্ত দুনিয়াকে অন্যায়-অবিচার-জুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতনের কবল হতে মুক্ত করবেন। তিনি বিশ্বব্যাপি ইসলামী হুকুমাত ও ন্যায়বিচার কায়েম করবেন এবং পৃথিবীর বুক থেকে অসত্য এবং শোষণের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তার আগমন অবশ্যম্ভাবী এবং এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। তার আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা।
▪️পরথম দল অর্থাৎ সুন্নি সম্প্রদায় ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের আকিদা ও বিশ্বাস মতে ইমাম মাহদী আ. শেষ যুগে মানবতার মুক্তি দূত হিসেবে আগমন করবেন। তিনি কবে ও কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন বা করেছেন কিনা সে বিষয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা শুধুই তাঁর আবির্ভাবের অপেক্ষায় রয়েছেন।
▪️কিন্তু অন্য দল অর্থাৎ বার ইমামিয়া শিয়া সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, যেহেতু রাসূল (স.) তার প্রতিনিধি বা ইমাম নিযুক্ত করে গেছেন। এই ইমামদের সংখ্যা হচ্ছে বারোজন, যাদের প্রথম হচ্ছেন হযরত আলী (আ.) এবং শেষ হযরত মাহদী (আ.)। শুধু তাই নয় এই বারো জন বংশপরম্পরায় পৃথিবীতে আগমণ করবেন। যেহেতু প্রথম হযরত আলী (আ.) সবার কাছেই অত্যন্ত পরিচিত এবং একাধারে তাঁর বংশধর ইমামগণ জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে সর্বদাই পরিচিত ছিল। তাই শেষ যুগের ইমাম অর্থাৎ ইমাম মাহদী (আ.) কবে ও কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন, তা তাদের কাছে দিবালোকের মতই অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আমাদের এই প্রবন্ধে ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত শিয়া সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরব ইনশা আল্লাহ।
▪️হযরত মাহদীর (আ.) জন্ম ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। হযরত হাসান আসকারী (আ.) ইরাকের সামেরায় জীবন যাপন করতেন। ইমামকে আব্বাসী খলিফা মুতাওয়াক্কেল নজর বন্দী করে রাখত। মাঝে মধ্যেই খলিফার কর্মচারীরা ইমামের বাড়ী হানা দিত। তাকে খলিফার দরবারে জোর করে নিয়ে যেত এবং বিভিন্নভাবে তার উপরে নির্যাতন চালাত।
(বিহারুল আনওয়ার, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং-৯৩।)
▪️ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম সম্পর্কে ঐ সময়ের মুসলমানরা এমনকি শাসকরা পর্যন্ত জানতো যে, ইমাম আসকারী (আ.) এর ঔরসে এক মহামানব জন্ম গ্রহন করবেন। যিনি সমস্ত অন্যায়, অবিচার জুলুম অত্যাচারকে সমুলে উপড়ে ফেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। এই কারণে তারা ইমামের উপর বিভিন্ন কঠোরতা, অবরোধ আরোপ করে। যেন তাকে নিঃশেষ করে ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম ও ইমামতের ধারাকে রুখতে পারে।
শেখ তুসি, কিতাবুল গেইবাত,
পৃ. ২৩১
▪️ইমাম আসকারী (আ.) তার ঘনিষ্ঠ জনদেরকে তার পরবর্তী ইমামের দুনিয়ায় আগমনের সংবাদ দিয়ে বলতেন শিঘ্রই আল্লাহ আমাকে একজন সন্তান দান করবেন এবং আমাকে তার দয়া ও অনুকম্পার অন্তর্ভুক্ত করবেন। আরও বলতেন যে, কোন শক্তিই কোন ষড়যন্ত্রই মহান আল্লাহ তা’আলার এই ইচ্ছাকে রুখতে পারবেনা। আল্লাহর অঙ্গিকার পূর্ণ হবেই। অন্যদিকে শত্রুরাও তাদের সমস্ত শক্তি সামর্থ নিয়ে মাঠে নেমে পড়ল। যেন আল্লাহর এই অঙ্গিকার পূর্ণতা না পায়। তারা ইমামকে সম্পূর্ণ নজর বন্দী করে রাখে, এমনকি তার বাড়িতে তার সঙ্গী-সাথী, আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীদের যাওয়া আসা ও নিয়ন্ত্রন করতো । কিছু কর্মচারীকে শুধুমাত্র এই কারণে নিযুক্ত করে রেখেছিল যে, যদি কোন ছেলে সন্তানকে ইমামের বাড়িতে ভূমিষ্ট হতে দেখে তাহলে যেন তাকে হত্যা করে। (ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ, হাফিজ সুলাইমান,পৃ. ৪৫৫।) এত কিছুর পরে ও নারজেস খাতুন গর্ভবতী হন, শুধুমাত্র ইমাম এবং তার বিশেষ কিছু সঙ্গী সাথী ও নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ এ খবর জানতো না ।
▪️অবশেষে এই মহান ব্যক্তি ১৫ ই শাবান ২৫৫ হিজরী ইরাকের সামেরা শহরে জন্ম গ্রহন করেন। যারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তার আহলে বাইত (ইমামদের) থেকে ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে বর্ণিত সহীহ মুতাওয়াত্তির হাদীসের প্রতি ইমান রাখে, তাদের জন্য মাহদী (আ.) ও তার জন্মের ব্যপারে ইমান রাখা ও স্বীকার করা ওয়াজিব। এটা অসম্ভব ব্যপার, যে ইমাম মাহদী (আ.) এখন ও দুনিয়াতে আসেননি । হাদীসে এসছে নবী (সা.) বলেছেন “ দ্বীন ইসলাম ধ্বংস হবেনা কিয়ামত পর্যন্ত অথবা বারোজন খলিফার আগমন পর্যন্ত তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছেন আলী ইবনে আবি তালিব অত:পর হাসান তারপর হোসাইন (আ.) তারপর মুহাম্মদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মদ, হাসান ইবনে আলী এবং তাদের সর্ব শেষ হচ্ছেন আল মাহদী (আ.) ”। (সহীহ মুসলিম,৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩-৪ ; সহীহ আল বুখারী ৪র্থ খণ্ড , পৃ. ১৫৬; ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৯ ; সহীহ আত তিরমিযি ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪২; সুনানে আবু দাউদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩০২; কানযূল উম্মাল; ১২তম খণ্ড,পৃ. ১৬৫।)
▪️এটা ও সত্য এবং প্রমানিত যে, ইমাম আসকারী (আ.) বিষাক্রান্ত হয়ে দুনিয়া থেকে চলে যান। তার দাফন কাফন ও জানাযায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহন করেছিল এবং জনগনের সম্মুখেই তাকে দাফন করা হয়।
ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম হয়েছে এ কথা মেনে নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কেননা এটা অসম্ভব ব্যপার যে, তার পিতা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন অথচ তার জন্ম হয়নি অথবা তার পিতার মৃত্যুর সময় তিনি মাতৃগর্ভে ছিলেন এবং পিতার মৃত্যূর কিছু কাল পর ভুমিষ্ট হয়েছেন। কেননা এটা কখোনই সম্ভব নয় যে, একজন মানুষ মারা যাবে আর তার সস্তান যে তার রক্ত মাংশে মিশে আছে শত শত বছর পর জন্ম নিবে। নিঃসন্দেহে ইমাম মাহদী (আ.) ভুমিষ্ট হয়েছেন এতে কোন সন্দেহ, সংশয় নেই এবং তিনি এখন পর্যন্ত জীবিত আছেন এবং আল্লাহর নির্দেশে লোক চক্ষুর অন্তরালে আত্মগোপন করে আছেন। এটা ও সম্ভব পর নয় যে, তিনি আত্মপ্রকাশের পূর্বেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন।
ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও মহামানব রাসূল (সা.) এর সাথে ইমাম মাহদীর বেশ কিছু বিষয়ে চমৎকার মিল পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) যেমন সর্বশেষ নবী তেমনি ইমাম মাহদী ও সর্বশেষ ইমাম। মহানবী (সা.) এর শুভাগমন সম্পর্কে যেমন পূর্ববর্তী নবী বা রাসূলগণ ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন, তেমনি ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমন সম্পর্কেও মহানবী (সা.) এবং পূর্ববর্তী ইমামগণ বাণী রেখে গেছেন।
▪️পরতিশ্রুত ইমাম মাহদীকে সাধারণত : ‘ইমামুল আসর’ বা নির্দিষ্ট সময়ের ইমাম এবং সাহিবুজ্জামান বা জামানার নেতা বলা হয়। জন্মের পর মহানবী (সা.) এর নামেই তার নাম রাখা হয়। তিনি জন্মের পর থেকে তার শ্রদ্ধেয় পিতা ইমাম আসকারী (আ.) এর প্রত্যক্ষ ও বিশেষ তত্ত্বাবধানে ছিলেন। স্বৈরশাসকের হুমকীর কারণে ইমামে মাহদীর (আ.) জন্মের খবর গোপন রাখা হয়েছিল। কারণ আব্বাসীয় শাসকরা ইমামের বংশ ধারকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে হন্যে হয়ে খুজছিল। বাড়ি বাড়ি তল্লাশী করে খুজে বের করার জন্য ওরা গোপন ঘাতক বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিল। তাই স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা শিশু ইমামকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা ও সুরক্ষিত রেখেছেন।
এ বিষয়ে এরপরের এপিসোডে
বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ।
আজ এটুকুই
শেষে এটুকুই উপসংহার
বারতম ইমাম মওলা সাহেবুজ্জামান আঃ বর্তমান
অতীত নয় তবে ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবেন বিশ্বাসীদের জন্য।
মূলগ্রন্থ :দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
ভাষান্তরে : মীর আশরাফুল আলম
▪️ইয়া ইয়াবনা জাহরা আল মোন্তাজের আল মাহদী (আঃ) আল মাদাদ।
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মা লা”ন কাতালাতাল আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।